কালস্রোতের নিরস্তর ধারায় সৃষ্ট হয় নতুনতর জনপদ, নগর সভ্যতা; যুগোত্তীর্ণ হওয়ার গৌরবে অভিষিক্ত হয় মানবতার কল্যানে নিবেদিত প্রাণ অসংখ্য জনতা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানই ছিল জলমগ্ন, প্রকৃতিগত কারণে সামঞ্জস্যতায় উল্লাপাড়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। জনশ্রুতিতে জানা যায় উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদী বিবর্তনের স্রোতে নাব্যতা হারায়, অব্যাহত ধারায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে সৃষ্টি হয় কাশবন যা উলুবন হিসেবে খ্যাত, সেই ‘উলু’র পরিবর্তিত রূপ উলা থেকে উল্লা। উলুবন এলাকায় জনবসতী গড়ে উঠলে এলাকার নামকরণ হয় উলুপাড়া, পরবর্তীতে উলুপাড়াই উল্লাপাড়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার দক্ষিন-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে রায়গঞ্জ, পূর্বে কামারখন্দ ও বেলকুচি উপজেলা, দক্ষিনে শাহজাদপুর ও পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে তাড়াশ ও পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
১৮৭৫ সালে উল্লাপাড়া থানা সৃষ্টির পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে পৌরসভা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নসহ এটি ‘এ’ ক্যাটাগরির উপজেলা। উপজেলা শহর ০৩টি মৌজা নিয়ে গঠিত। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে পাবনা-বগুড়া মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হলে উল্লাপাড়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালু হওয়ায় সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একে উত্তরাঞ্চলের ‘গেটওয়ে’ বা ‘প্রবেশপথ’ বলা হয়ে থাকে। ত্রিমূখী যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্বলিত উল্লাপাড়া উপজেলা ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষার দিক দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার অন্যতম সমৃদ্ধ উপজেলা এবং উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী
২০ এপ্রিল, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে এ উপজেলার ঘাটিনা রেলওয়ে ব্রীজের উপর পাকবাহিনীর সংগে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যপক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ২০জন পাক সেনা নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ০১টি (ঘাটিনা), দহকুলা ব্রিজ(গনকবর), দিল পাশার ব্রিজ(বংকিরাট), ও বর্ধনগাছা ব্রিজ।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
মসজিদ ৭৭১টি, মাজার ৫টি, মন্দির ৮৫টি, তীর্থস্থান ০২টি।
জনসংখ্যা
মোট ৫,৪০,১৫৬ জন( ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ২,৬৯,৪৮১ জন, মহিলা ২,৭০,৬৭৫ জন।
শিক্ষার হার
পুরুষ ৩৮.৫%, মহিলা ২৫.৫%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কলেজ ২০টি, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো সরকারী আকবর আলী কলেজ, উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ ও উল্লাপাড়া কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয় ৫৪টি, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হামিদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, উল্লাপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫টি, মাদ্রাসা ৯০টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৬টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৬টি, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২টি, সঙ্গীত বিদ্যালয় ১টি, স্যাটেলাইল স্কুল ১০টি।
প্রাচীন প্রতিষ্ঠান
ঝিকিড়া বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়(১৯০৩), উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও টেকঃ কলেজ (১৯০৬) এবং লাহিড়ী মোহনপুর কে এম ইনষ্টিটিউশন (১৯১৫)
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
সিনেমা হল ১টি, কমিউনিটি সেন্টার ১১টি, সাহিত্য সমিতি ২টি, মহিলা সংগঠন ১৩০টি এবং ক্লাব ৫০টি।
পার্ক : ১টি (রিয়া রুপন শিশু পার্ক)
জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা সমূহ
কৃষি ৪১.৭৫%, ব্যবসা ২০%, চাকুরী ৬%, শ্রমিক ৩০%, অন্যান্য ২.২৫%।
ভূমি ব্যবহার
১.উপজেলার নীট আবাদী জমির পরিমানঃ ৩৩,০৮০০হেক্টর, ২.এক ফসলী জমির পরিমানঃ ২৮০০.০০ হেক্টর,৩. দুই ফসলী জমির পরিমানঃ ২০৯৫৮ হেক্টর, ৪.তিন ফসলী জমির পরিমানঃ ৯৩২২ হেক্টর, ৫.উপজেলার মোট ফসলাধীন জমির পরিমানঃ ৭২৬৮২ হেক্টর, ৬.ফসলের নিবিড়তার হারঃ ২২০%, ৭.বনাঞ্চল/ফলের বাগানঃ ১৮৫ হেক্টর, ৮.সেচকৃত মোট জমির পরিমানঃ ২৩১১৫ হেক্টর।
ভূমি নিয়ন্ত্রন
ভূমিহীন ২৮%, বড় চাষি ১৫%, ছোট চাষি ৩২% এবং মধ্যম চাষি ২৫%।
প্রথম শ্রেণীর আবাদি জমির মূল্য (০.০১ হেক্টর প্রতি) ১,০০,০০০/- টাকা।
খাদ্য পরিস্থিতিঃ
জনসংখ্যা অনুপাতে খাদ্য প্রয়োজনঃ ৭৬৪৩৪ মেঃ টন, বীজ, গো-খাদ্য ও অপচয়ঃ ২০৬৭৬ মেঃ টন, মোট খাদ্য শষ্য প্রয়োজনঃ ৯৭১১০ মেঃ টন, মোট খাদ্য উৎপাদন(চাল ও গম)ঃ ১,২৬,৪৬৯ মেঃটন, মোট খাদ্য উদ্বৃত্তঃ ২৯,৩৫৯ মেঃটন।
প্রধান কৃষি ফসল
ধান, পাট, গম, যব, আলু, সরিষা, তিল ইত্যাদি।
বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি
আউশ ধান, তিসি, চীনা, কাউন ইত্যাদি।
প্রধান ফল
আম, জাম, কাঠাল, তাল, নারিকেল ইত্যাদি।
যোগযোগ ব্যবস্থা
উপজেলায় পাকা রাস্তা ৭৮ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৩৪কিমি, কাচা রাস্তা ৫৯১কিমি, রেলপথ ২১কিমি, রেল ষ্টেশনঃ ৩ টি এবং নৌপথ ৬৭ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত/বিলুপ্তপ্রায় বাহন
পালকি, ঘোড়ার গাড়ী এবং গরুর গাড়ী।
শিল্প ও কলকারখানা
সিমেন্ট কারখানা ১টি, ফ্লাওয়ার মিল ২টি, ফিড মিল ১টি, দুগ্ধ শীতলি করন কেন্দ্র (মিল্ক ভিটা) ১টি, জুতার কারখানা ১টি, কাপড় বুনন শিল্প(তাঁত শিল্প), হিমাগার ১টি, এবং বরফ কল ৪৫টি।
কুটির শিল্প
তাঁত, বাঁশের কাজ, স্বর্ণকার, কামার, কুমার এবং সুতার ও সেলাই মিস্ত্রি।
হাট বাজার
১. উল্লাপাড়া, ২.গয়হাট্টা, ৩.প্রতাপ, ৪.বিনায়েকপুর, ৫.সলপ, ৬.বড়হর, ৭.হাটিকুমরুল, ৮.পাচিলা হাট, ৯.মোহনপুর ধরইল হাট, ১০. উল্লাপাড়া গ্যাস লাইনহাট, ১১. কয়ড়া হাট, ১২. অনুখা হাট, ১৩. পাচিলা হাট, ১৪. রাজমান হাট, ১৫. পুঠিয়া হাট, ১৬. উধুনিয়া হাট, ১৭. বেতকান্দি হাট, ১৮. বন্যাকান্দি হাট, ১৯. কৃষকগঞ্জ হাট, ২০. হাটিকুমরুল নিউটাউন হাট, ২১. বালসাবাড়ী হাট, ২২. নলসোন্দা হাট, ২৩. মোড়দহ কুড়া গাছা হাট, ২৪. বোয়ালিয়া হাট, ২৫. জনতার হাট, ২৬. চৌবিলা হাট, ২৭. নয়ানগঞ্জ হাট, ২৮. শাহজাহানপুর হাট, ২৯। নবসৃষ্ট পূর্বদেলুয়া হাট।
প্রধান রপ্তানি দ্রব্য
পাট, সরিষা, তিল, ময়দা, পিয়াজ, মরিচ, শাকসবজি,মাছ ইত্যাদি।
এনজিও কার্যক্রম
আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ, অরিডার, কেয়ার এবং মাতৃভূমি।
উন্নয়ন সংস্থা
সৃজন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা এবং শিশু ও নারী কল্যাণ সংস্থা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস